সঞ্চয়ী হিসাবে সঞ্চিত আমানতের পরিমাণ ব্যাংক সবসময় গোপন রাখে। ফলে আমানতকারী তার জমাকৃত অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকে। আদালতের নির্দেশ ছাড়া কোনো ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনকেও দেওয়া যাবে না। তথ্য নিতে হলে আদালতের লিখিত অনুমতি লাগবে। এই আইনটি সুচারুভাবে পালনের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অভিযোগ ও অনুসন্ধান তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের হিসাব সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের বিষয়ে ২০০৯ সালের ২৩ জুন জারি করা দুদকের আদেশ মেনে চলতে হবে। দুদকের ঐ আদেশে বলা হয়েছে, বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে দুদক কর্তৃক সুষ্ঠু অনুসন্ধান এবং মামলা তদন্তের স্বার্থে দুদক আইন ২০০৪-এর ১৯(১)(ঘ) ধারার ক্ষমতাবলে বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয়/বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গের ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকার্স বুকস এভিডেন্স অ্যাক্ট (বিবিইএ) ১৮৯১-এর ৫ও ৬(১)ধারা এবং কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮-এর ৯৪(১) ধারা অনুযায়ী আদালতের সুনির্দিষ্ট আদেশ ব্যতীত আমানতকারী/হিসাবধারীর হিসাব সংক্রান্ত তথ্য অন্য কোনো পক্ষকে প্রদানের সুযোগ নেই । তবে আদালত বা থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কার্যবিধি অনুসারে তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে পূর্বঘোষিত সময় ও স্থানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দলিলপত্র নিয়ে হাজির হতে আদেশ দিতে পারেন। এই সংক্রান্ত তথ্য যদি কোনো ব্যাংক বা ব্যাংকারের হেফাজতে থাকে তাহলে দায়রা জজের পূর্বানুমতি নিয়ে দন্ডবিধির সুনির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী অপরাধ তদন্তের জন্য তথ্য দিতে আদেশ দিতে পারে। অন্যান্য ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের লিখিত পূর্বানুমতি লাগবে। ব্যক্তির সম্পদ বা ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের পরিমাণ কার্যত ব্যক্তির একটি গোপনীয় বিষয়। আন্তর্জাতিকভাবেও এক্ষেত্রে যথেষ্ট গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। তবে নিম্নোক্ত কারণে ব্যাংক গ্রাহকের হিসাবের গোপনীয়তা ভঙ্গ করতে পারে—
১. গ্রাহকের নিজস্ব আদেশক্রমে
২. সরকারের বিশেষ আইনের নির্দেশে
৩. দেশের প্রচলিত আইনের প্রয়োজনে ব্যাংক গ্রাহকের হিসাবের গোপনীয়তা প্রকাশ করতে পারে। যেমন :আয়কর আইনের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য।
উপরের আলোচনার শেষে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, ব্যাংকের হিসাবের গোপনীয়তা রক্ষা করা প্রত্যেক ব্যাংক কর্মচারীর অবশ্যই কর্তব্য।
আরও দেখুন...